Monbari

আগে ছিলাম ফাসির আসামি এখন যাবত জীবনের আসামি

সকালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিতে গিয়েছি। ছাত্র ছাত্রীরা এসেছে। আমাদের রুমে ৪ জন ইনভিজিলেটর। দুই জন সিনিয়র আপু এবং আরেকজন আমার বন্ধু। আমাদের মাঝে গল্প চলছিল। কথায় কথায় আপু জিজ্ঞাসা করলেন এই যে তোমরা মানুষের এত দু:খ কষ্টের গল্প শোনো তোমাদের কখনো মন খারাপ হয় না?

তখন একটা বিশেষ অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ল। একজনের জীবনগল্প।

আমার সামনে যিনি দাড়িয়ে আছেন লম্বায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট করেছেন। হাতে একগাদা চিকিৎসা পত্র। তার আচরণে ভদ্রতা সুস্পষ্ট। প্রথমে এসেই সময় চেয়ে নিলেন। একটা ব্যাংকে জব করেন তিনি।

কিছু দিন আগে রাজশাহীতে গিয়েছিলেন। শখের বসে বাইকে ঘুরতে বেড়িয়েছিলন। সময়টা বেশ ভালো কাটছিলো। কিন্তু এই ভালোলাগাটাই খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।  অল্প সময়ের ব্যবধানেই তার জীবনে নেমে এলো অন্ধকার।

 হঠাৎ করেই অপর দিক থেকে প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসা আরেকটি বাইকের ধাক্কায় তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিল। তিনি এই টুকু শুধু বলতে পারেন।

তারপর পেরিয়ে গেছে ৪০ টি দিন। আইসিইউতে, রাজশাহী থেকে বিএসএমএমইউ তে। যেদিন চোখ খুললেন দেখলেন তার সারা শরিরে শুধু তার (নল,ক্যনুলা,ক্যথেটার) আরা তার। মুখের চেহারা বদলে গেছে (মুখের হাড় ভেংগে যাওয়ায়)। এক চোখ খুলতে পারছেন না। চোখের ডাক্তার বলেছেন চোখের নার্ভ ইনজুরি হয়েছে আর ভালো হবে না। সারা জীবনের জন্য একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেল।

এখন তিনি কিছুটা ভালো। তবে আচার আচরণ বাচ্চাদের মত হয়ে গেছে। বাবা মাকে ছাড়া  এক মুহূর্ত থাকতে পারেন না।

ঢাকায় সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। গত বিসিএসে পুলিশে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বাবা মাসহ গিয়েছেন। কিন্তু চাকরিতে যোগদান করেন নাই, বা করতে পারেন নাই (শারিরীক এবং মানসিক কারনে)। বন্ধুরা তাকে  চাকরিতে যোগদান করতে অনেক অনুরোধ করছে। কিন্তু করেন নাই। তিনি বন্ধুদের চাকরিতে যোগদান করতে দেখে তিনি তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন। আর নিজের ভবিষ্যতও ভাবছেন।

তিনি বাসায় আসার পর তার মামী দেখতে এসে বলেছেন কি বাবা ট্রেনিং কেমন হলো!?

স্যার আমি কান্না থামাতে পারি নাই,আজ ও আমার খাওয়া দাওয়া হয় নি ঘুমাতে পারছি না। আমার বুকের ভিতর কেমন জানি  ভেঙ্গে যাচ্ছে।

আমার সাথেই কেন এমন হলো? আমার এখন মনে হচ্ছে আমি আগে ছিলাম ফাসির আসামি এখন যাবত জীবনের আসামি।

আরো দেখুন

বোবাই ধরা বা Sleep Paralysis কি?

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *