sleep paralysis

বোবাই ধরা বা Sleep Paralysis কি?

বোবাই ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস

 বোবা ধরা এর পরিভাষাটির সাথে একদমই পরিচয় নেই এমন মানুষ বোধহয় পাওয়াই যাবে না। ঘুমিয়ে আছেন হঠাৎ করেই আপনার ঘুম ভাঙলো। আপনার মনে হল কেউ আপনার উপর চেপে ধরে বসে আছে। চোখের পাতার সাথে আপনার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হঠাৎ মনে হল কালো একটি ছায়া চারপাশ ঘিরে আছে আর কিছুক্ষণ স্থায়ী থাকার পর এই অনুভূতির রেশ যখন কেটে গেল, তখন মনে হল এতক্ষণ যা হয়েছে তা কোন স্বপ্ন ছিল।

 … তাহলে কি হলো ? তবে কি শয়ন কক্ষে স্বয়ং ভূত এসে ঘুরে গেল?

মাঝরাতে এমন অনুভূতি অনেকেরই হতে পারে। সাময়িকভাবে একে বোবা বা ভূতের কর্মকাণ্ড বলা হয়ে থাকলেও আদতে এটি একটি এক ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ যা ঘুমের মধ্যে হয়ে থাকে। আর বৈজ্ঞানিক ভাষায় এ অসুস্থতাকে বলা হয়ে থাকে স্লিপ প্যারালাইসিস বা ঘুমের অচল অবস্থা।

 কি হয় যখন বোবাই ধরে?

পেন সেলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ব্রায়ান সার্কের মতে বোবাই ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস এর ক্ষেত্রে তিন ধরনের দৃষ্টিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন তৈরি হতে পারে।

  1.  প্রথমটি ইন্ট্রোডোবা ঘরের ভেতরে কোন অতিপ্রাকৃত কিছুর উপস্থিতি টের পাওয়া
  2. দ্বিতীয়টি আপনার মনে হতে পারে যে কোন দৃশ্যমান বা ঈশ্বর অদৃশ্য সত্তা আপনার বুকের ওপর চেপে বসে আছে ফলে বুকে এক ধরনের চাপ অনুভব করবেন শ্বাস নিতে না পারার অনুভূতি তৈরি হবে.
  3. তৃতীয় ধরনের অনুভূতিটি খুবই সাধারণ এক্ষেত্রে মানুষ নিজেকে শরীর থেকে আলাদা বলে মনে করে মানুষের মধ্যে এমন এক ধরনের অনুভূতি হয় যেন শয়নকক্ষের ভেতরে উড়ে বেড়াচ্ছেন অথবা আপনার মনে হতে পারে আপনাকে কেউ শোয়া অবস্থায় শুনলে তুলে ফেলছে এবং কোন অচেনা গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে

বোবাই ধরার কারণ সমূহ:

মা ও ক্লিনিক এর গবেষণা অনুযায়ী ১০ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের ভেতর বেশি দেখা দেয়। সমস্যা কি স্লিপ এপনিয়া কিংবা নারকো্লেপ্সি ধরনের নিদ্রা জনিত রোগে আক্রান্তদের বেলায় বোবাই ধরার হার বেশি। প্যারালাইসিস বংশগত কারণেও হতে পারে বিষণ্নতা বা উদ্বিগ্নতার রোগীদের শতকরা ৩২ ভাগের ভেতরে সমস্যাটি দেখা যায়। 

এর বাইরে সাধারণভাবে যে-সব কারণে দেখা যায় সেগুলো হলো-

1.   কম ঘুমানো
2. ঘুমের সময় পরিবর্তন
3. উপর হয়ে ঘুমানো
4. মাদকাসক্তি
5. বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা এ জাতীয় মানসিক সমস্যা থাকা
6. নারকো্লেপ্সি বা অতি ঘুম-কাতরতা, অন্যান্য নিদ্রা জনিত রোগ
7. কর্ম ক্ষমতা বাড়ানো ওষুধের ব্যবহার

পরিত্রাণের উপায়:

প্রথমত একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। তিনি আপনার মেডিকেল রেকর্ড ঘেটে দেখবেন এবং আপনার অন্য কোন নিদ্রা জনিত রোগ আছে কিনা দেখবেন। তবে যতই বোবাই ধরুক না কেন কিছু নিয়ম মেনে চললে এই বিদঘুটে অবস্থা থেকে রেহাই পেতে পার। যা কিছু করণীয়- 

  • সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ
  • ঘুমের অনিয়ম পরিহার
  • মানসিক চাপ বর্জন
  • স্লিপিং পিল পরিহার

ঘনঘন বোবায় ধরা আক্রান্ত হলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না

আমাদের মন নিয়মিত পরিবর্তনশীল, যখন বেশি খারাপ লাগবে, তখন নিচের কাজগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন-

  1. আগের আনন্দদায়ক কাজগুলো আবার শুরু করার চেষ্টা করুন
  2. নিয়মিত ঘুমানোর এবং জেগে ওঠার সময় বজায় রাখার চেষ্টা করুন
  3. যতটা সম্ভব শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন
  4. ক্ষুধা পরিবর্তন সত্ত্বেও নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করুন
  5. বিশ্বস্ত বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন
  6. যতটা সম্ভব পারিবারিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করুন

কেউ মানসিক সমস্যায় ভুগছে কিনা খুব সহজে বোঝার উপায়

1. আচরণগত পরিবর্তন যেমন পারিবারিক কাজ, স্কুল, চাকুরি বা সামাজিক কার্যকলাপ সম্পর্কিত দায়িত্ব ঠিকমতো করতে না পারা

2. উত্তেজিত, আক্রমণাত্মক আচরণ, অথবা স্বাভাবিক কার্যকলাপ হ্রাস বা বৃদ্ধি

3. অলীক/কাল্পনিক বিশ্বাস করা

4. কানে অদৃশ্য কথা শোনা বা সেখানে নেই এমন জিনিস দেখা

5. তার যে মানসিক  পরিবর্তন হয়েছে তা উপলব্ধির করতে না পারা

Spread the love

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *