৩৩ বছর পর
৫০ বছরের সিরাজুল চেম্বারে এসেছেন তার ভাতিজার সাথে।
সিরাজুল ইসলাম, বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। এই গ্রাম থেকে তিনি যখন আর্মিতে সৈনিক পদে যোগদেন তাও প্রায় ৩৩ বছর আগের কথা। আজ থেকে ৩৩ বছর আগে- এই গ্রাম থেকে প্রথম কেও আর্মিতে সুযোগ পেলো। সবাই ভীষণ খুশি, মা খুশি, বাবা খুশি, ভাইয়েরাও খুশি, গ্রামবাসীরাও। সবই ভালো চলছিল। চাকুরী থেকে বাড়িতে আসেন ছুটিতে। সেইবার ই শেষ আসা। আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। বাড়ি থেকে অফিসে খোঁজ নিয়েছে, সেখানেও সে নেই। একদিন দুইদিন করে প্রায় ১ বছর খোঁজার পরও যখন তাকে পাওয়া গেল না। আস্তে আস্তে সবাই ভুলে যেতে শুরু করল- শুধু মা বাবা ছাড়া। মা মারা গেলেন। ২ বছর পর বাবাও মারা যায়। ৫ ভাই ৩ বোন বাবা মার সম্পত্তি ভাগ করে নেয়। সবাই ভুলে যায় তাদের একজন ভাই ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাধে একটি টেলিফোন।
চেয়ারম্যানের কাছে একটি ফোন আসে, তাদের গ্রাম থেকে ৩৩ বছর আগে কোন মানুষ হারিয়ে গেছে কিনা। যার বাড়ি একটি স্কুলের পাশে। গ্রামে কলরব পরে গেল। মুরুব্বিরা মনে করতে পারলেন এক সেনা সদস্য তাদের এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছে প্রায় ৩৩ বছর আগে। জানা গেলো সিরাজুল ইসলাম ভারতের একটি জেলে আছেন। তিনি শুধু তার গ্রামের নাম আর তার স্কুলের পাশে তাদের বাড়ি মনে করতে পারেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা সে আবার ফিরে আসে। কিন্তু এই ফিরে আসা আর আগের মত আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে না। সে কিভাবে ভারতের জেলে গেলো সঠিক ভাবে বলতে পারে না। একেক বার একেক কথা বলে। বাড়িতে এসে শুধু তার বড় ভাইকে চিনতে পারছে। ৩৩ বছর আগের তার আইডি কার্ডের ছবি দেখে নিজের ছবি বলে দাবি করছে। বোনেরা তার বার্থ মার্ক নিশ্চিত করেতে পেরেছে। কিন্তু ছোট দুই ভাই বাধ সেজেছে। তারা কিছুতেই তাকে মেনে নিতে পারছে না। পুরোপুরি ভাই হিসাবে অস্বীকার করছে। কারণ… বাবার সম্পত্তি। তারা ভোগ করছে। ভাইকে স্বীকার করলে আবার তাকে ভাগ দিতে হবে।
সময় বয়ে যায় সম্পর্কও হারিয়ে যায়, তার উপর যদি সহায় সম্বল হাত ছাড়া হয়ে যায়।
বাস্তব জীবন থেকে নেয়া কথাগুলো, খুবই মর্মস্পর্শী হ্রদয় বিদারক চুখের জল এসে যায়।জীবন এমনই।