মাদকাসক্তি (Substance Use Disorder)
মাদকাসক্তি বলতে মাদকদ্রব্যে আসক্তি। মাদক হল উত্তেজনা অথবা অবসাদ সৃষ্টিকারী যে সকল দ্রব্য গ্রহণে মানুষের স্বাভাবিক চেতনা লোভ পায় এবং নেশার সৃষ্টি করে, আচরণের পরিবর্তন ঘটায়। মাদকাসক্তি হল কয়েকটি লক্ষণের সমন্বয়
১। নিয়মিত মাদক সেবনের ফলে যা মানসিক ও শারীরিক নির্ভরশীলতা।
২। বন্ধ করলে প্রত্যাহার জনিত উপসর্গ দেখা দেয়
৩। ক্রমাগত নেশার প্রতি আকর্ষণ ও ব্যবহৃত মাত্রার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যায় ও
৪। দৈনন্দিন কাজ সঠিকভাবে করতে না পারা।
সাধারণত উঠতি বয়সী তরুণ ও তরুণীদের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশী হলেও মাঝ বয়সী অনেক লোকের মাঝেও পাওয়া যায়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভাং, গাঁজা, চরস, তাড়ি, সিদ্ধি ইত্যাদি ব্যবহারের ইতিহাস পাওয়া যায়। বর্তমানে হেরোইন, পেথেডিন, ঘুমের বড়ি, অ্যালকোহল, ফেনসিডিল এবং অন্যান্য কফ সিরাপে আসক্তি রোগীর সংখ্যা বেশী। অতিসম্প্রতি ইয়াবার পাশাপাশি টাপেন নামক মাদকদ্রব্য গ্রহণ বাংলাদেশে বেড়ে গেছে। ব্যবহারকারীরা সাধারণত অনেক ধরনের মাদক একত্রে অথবা বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করে।
মাদকাসক্তির কারণসমূহ
- ধূমপানের অভ্যাস
- মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা: এর কারণে মাদকাসক্তির প্রকোপ বেশি
- মাদকদ্রব্য সম্বন্ধে কৌতূহল
- বন্ধুদের চাপে মাদক গ্রহণ
- হতাশা, ব্যর্থতা দূর করতে মাদক গ্রহণ
- পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব
- নিছক আনন্দের জন্য
- পরিবারে মাদকের প্রভাব
মাদকাসক্তির লক্ষণসমূহ
শারীরিক লক্ষণসমূহ
- লাল ও ছলছলে চোখ
- ক্ষুধামন্দা, বমিবমি ভাব, বমি হওয়া
- ভারসাম্যহীনতা (Ataxia)
- হাত-পা কাঁপা
- বুক ধড়ফড় করা
- অতিরিক্ত দুর্বল লাগা, ঘুম ঘুম ভাব
- হাত-পায়ের শিরায় সুচ ফোটানোর দাগ এবং ফুল হাতা শার্ট পরে এগুলো ঢাকার প্রচেষ্টা
- স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়া এবং খাওয়া দাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন হওয়া
আচরণগত লক্ষণসমূহ
- লেখাপড়া না করা
- নিজের ও পোশাক পরিচ্ছদের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন
- যখন তখন বাইরে যাওয়া, অধিক রাতে ঘরে ফেরা
- পরিবারের সবার সাথে সংসারের কাজে এগিয়ে না আসা এবং বেশি বেশি হাত খরচের টাকা-পয়সা চাওয়া
- বিছানার আশপাশে এবং বালিশ ও বিছানার নিচে ট্যাবলেটের খালি স্ট্রিপ পড়ে থাকা
- অধিক রাতে নিদ্রা যাওয়া এবং দিনের বেলায় ঘুমানো
- অনেক সময় অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় ঘরে ফেরা এবং পরিবারের লোকজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করা
- খিটখিটে মেজাজ
- প্রায়ই মিথ্যা কথা বলা, চুরি করা
- প্রায়ই রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনার কবলে পতিত হওয়া
- অসামাজিক ও অপরাধমূলক কাজকর্মে লিপ্ত হওয়া
- নতুন (নেশাগ্রন্থ) বন্ধুবান্ধব হওয়া ও পুরোনো ভাল বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক না রাখা
- কাউকে পরোয়া না করা
মাদকাসক্তির পরিণতি :
- ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়
- বিভিন্ন ধরনের শারীরিক রোগ যেমন- লিভার, কিডনি, ব্রেইন ইত্যাদি অঙ্গের রোগ হতে পারে এমনকি মৃত্যু হতে পারে এ রোগেও আক্রান্ত হয় যেমন- এইডস, হেপাটাইটিস ইত্যাদি
- ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যহানি হতে থাকে (ওজন অতিরিক্ত কম বা বেশি হতে পারে)
- যৌন সমস্যা যেমন যৌন অক্ষমতা, পুরুষত্বহীনতা হয়
- গর্ভকালীন সময়ে মাদকাসক্তি হলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হয়
- ফুসফুস, খাদ্যনালি, পাকস্থলী ইত্যাদির ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে
- অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া
- লেখাপড়া ও পেশাগত কাজে পিছিয়ে পড়া
- সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া
- অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
- মানসিক চাপে ভোগে ও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়
চিকিৎসা
মাদকাসক্তির চিকিৎসা সাধারণত বাড়িতে চিকিৎসা করা কঠিন। তবে চাইলে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব।
মাদকাসক্তি চিকিৎসার সর্বপ্রথম ধাপ হলো উক্ত ব্যক্তির মাদক ছাড়ার ব্যাপারে যথাযথ মোটিভেশন। মাদকাসক্ত ব্যক্তি যদি মাদক ছাড়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় তবে তাকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মাদক ছাড়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হচ্ছে মাদক প্রত্যাহারজনিত শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারা